নেটওয়ার্কে এক কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারে ডাটা পরিবহনের জন্য কোনাে না কোনাে মাধ্যম দরকার হয়। যে মাধ্যমে নেটওয়ার্কের ডিভাইসসমূহ সংযুক্ত থাকে তাকে বলা হয় নেটওয়ার্ক মিডিয়া। এই নেটওয়ার্ক মিডিয়ার মধ্য দিয়েই ডাটা প্রবাহিত হয় এবং এর উপর নেটওয়ার্কের পারফরম্যান্স অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই নেটওয়ার্কে প্রয়ােজনানুসারে উপযুক্ত নেটওয়ার্ক মিডিয়া ব্যবহার করা প্রয়ােজন। 

প্রতিটি নেটওয়ার্ক মিডিয়ারই আছে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য। এসব বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে সেসব মিডিয়ার উপযুক্ততা যাচাই করা যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের মিডিয়ার মধ্যে নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা যেতে পারে তামা, কাঁচ ও বাতাস। এর প্রতিটির কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে।


মিডিয়া হিসেবে তামা/Copper as media

নেটওয়ার্কে সবচেয়ে পুরাতন মিডিয়া হলাে তামা বা কপার। শতাব্দীব্যাপী এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং আগামী শতাব্দীতেও এর ব্যবহার থাকবে। ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল প্রেরণে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। কম্পিউটার সার্কিটের মূল বিষয় হলাে ইলেকট্রিসিটি। পার্সোনাল কম্পিউটারে লজিকবাের্ডে ইলেকট্রিসিটি প্রবাহিত হয়, অন্য কিছু নয়। আর তাই কম্পিউটারের ক্ষেত্রে তামার ব্যবহার কোনাে অসুবিধার সৃষ্টি করে না। তবে তামার তারের অসুবিধা হলাে এর মধ্য দিয়ে ইলেকট্রিক সিগন্যাল যেতে যেতে এটি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। 

প্রথম আইবিএম মেইনফ্রেম নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়েছিল তামার তৈরি শিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার (STP) ক্যাবল। বর্তমানে কয়েক ধরনের তামার ক্যাবল নেটওয়ার্কিঙের জন্য ব্যবহৃত হয়। এসবের পরিবহন ক্ষমতা ভিন্ন এবং ভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়। 

তামার ক্যাবলকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে: কোএক্সিয়াল (Coaxial) এবং ট্যুইস্টেড পেয়ার (Twisted pair)


কোএক্সিয়াল ক্যাবল/Coaxial Cable

ইথারনেট লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয় কোএক্সিয়াল (Coaxial) ক্যাবল, যাকে সংক্ষেপে কোক্স (Coax) বলা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্কে এটি ব্যবহৃত হতে পারে।

কোএক্সিয়াল ক্যাবলের মধ্যখান দিয়ে একটি সলিড তামার স্ট্রান্ড চলে যায় আর এর বাইরে থাকে ফোম ইনসলেশন। ফোম ইনসুলেশন ঘিরে থাকে আরেকটি পরিবাহী তামার অয়্যার মেশ টিউব। অয়্যার মেশ মূল তারকে EMI থেকে রক্ষা করে। সব বাইরে থাকে প্লাস্টিক জ্যাকেট।

বিভিন্ন সাইজের কোএক্সিয়াল ক্যাবল পাওয়া যায়। এর সাইজকে RG দিয়ে প্রকাশ করা হয় এবং AC বা DC কারেন্টে এই ক্যাবলের রােধক্ষমতা (Resistance) দিয়ে একে বিভিন্ন ক্লাসে ভাগ করা হয়। 

বর্তমান নেটওয়ার্কিঙে ব্যবহৃত এরকম কিছু কোএক্সিয়াল ক্যাবল হলাে:-

  • ৫০ ওহম, RG-৪ ও RG-11 ক্যাবল যা থিক ইথারনেটে ব্যবহৃত হয়।
  • ৫০ ওহম, RG-58, যা থিন ইথারনেটে ব্যবহৃত হয়।
  • ৭৫ ওহম, RG-59, এটি ক্যাবল টিভিতে ব্যবহৃত হয় (ডিশের লাইন টানা হয় এই ক্যাবল দিয়ে)।
  • ৯৩ ওহম, RG-62, এই ক্যাবল ব্যবহৃত হয় আর্কনেটে।

কোএবিষয়াল ক্যাবলের বৈশিষ্ট্যসমূহঃ

  • কোএক্সিয়াল ক্যাবলের দাম  তুলনামলকভাবে কম। থিন কোএক্সিয়াল ক্যাবলের দাম UTP ও UTP এর চেয়ে কম। আবার থিক কোএক্সিয়াল ক্যাবলের দাম STP ও UTP 5 এর চেয়ে বেশি। কিন্তু ফাইবার অপটিকের চেয়ে কম।
  • কোএক্সিয়াল ক্যাবল সহজেই ইনস্টল করা যায়। নাড়াচাড়ায় এ ক্যাবলের কোনো ক্ষতি হয় না। বাস টপােলজিতে সাধারণত কোএক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ডিভাইসের সাথে এ ক্যাবলকে যুক্ত করার জন্য BNC T কানেক্টর কিংবা ভ্যাম্পায়ার ট্যাপ ব্যবহৃত হয়। এধরনের ক্যাবলকে টার্মিনেট করার দরকার পড়ে।
  • বর্তমানে কোএসিয়াল ক্যাবলের মধ্যে ডাটা পরিবহনের ক্ষমতা হলাে ১০ এমবিপিএস। কোএক্সিয়াল ক্যাবলের ভেতরের পরিবাহীর ডায়ামিটার বাড়ার সাথে সাথে এর পরিবহন ক্ষমতাও বাড়ে।
  • থিননেটে একটি সেগমেন্টে ৩০টি কম্পিউটার এবং থিকনেটে একটি সেগমেন্টে ১০০টি কম্পিউটার যুক্ত করা যেতে পারে।
  • কোএক্সিয়াল ক্যাবল তামার তৈরি হওয়ার কারণে এতে এটেনুয়েশন রয়েছে। তবে এটি টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের চেয়ে কম।
  • তামার তৈরী বলে এতে EMI সমস্যা রয়েছে এবং এর ফলে কোএক্সিয়াল ক্যাবলে ইভসড্রপিং ঘটতে পারে।
নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত কোএক্সিয়াল ক্যাবলকে প্রধানত দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়ঃ
  1. থিন কোএক্সিয়াল এবং 
  2. থিক কোএক্সিয়াল।
এসব ক্যাবল ব্যবহার করে যে নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় থিননেট ও থিকনেট।

থিননেট ও থিকনেট  পরবর্তী পোস্টে আলোচনা করা হবে। ইনশা-আল্লাহ।

Post a Comment

أحدث أقدم